পেকুয়ার ৬ ইউপি নির্বাচন

আ.লীগের গলার কাটা হতে পারে ৫ বিদ্রোহী প্রার্থী

মো. বেলাল উদ্দিন :

আসন্ন ইউপি নির্বাচনে পেকুয়ার ৪ ইউনিয়নে ৫ আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই ৫ বিদ্রোহী প্রার্থী নৌকার বিজয়ে গলার কাটা হতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। ২৬ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ৩য় দফা ইউপি নির্বাচনের দলীয় প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণার পরও এসব প্রার্থীরা মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও দাবী তৃণমূল আওয়ামী লীগের।

উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়ন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল করিম। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান এম শহীদুল ইসলাম চৌধুরী। দলের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পরও মাঠে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী তোফাজ্জল।

তাঁর অনুসারীরা ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট এ কলাগাছ রোপন করে দলের প্রার্থীকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের ভোট বিভাজন হয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাছে নৌকার পরাজয়ের শঙ্কা দেখছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আকতার আহমদ। তিনি বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বিদ্রোহী প্রার্থী হলে নৌকার বিজয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তোফাজ্জল করিম বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের হয়ে মানুষের জন্য কাজ করেছি। এবারে আমি নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তে উজানটিয়ার তৃণমূল আওয়ামী লীগ হতাশ। উজানটিয়ার জনগণ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চায় আসন্ন নির্বাচনে আমি প্রার্থী হই।

এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী এম শহীদুল চৌধুরী ব্যাপারটি দেখছেন ভিন্নভাবে। তাঁর মতে জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, তোফাজ্জল করিম নৌকা না পেলেও দলের প্রার্থীর হয়ে কাজ করবে মর্মে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁর সুর পালটে গেছে। নৌকার বিজয় ঠেকিয়ে দেয়াই এখন তাঁর লক্ষ্য।

এদিকে মগনামা ইউনিয়নে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আদলে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন দুজন। তাঁরা হলেন, উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি মোজাম্মেল হোছাইন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদুল ইসলাম। তাঁরা দুজনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন।

এ ইউনিয়নেও নৌকার প্রার্থী নাজেম উদ্দিনের বিজয় নিশ্চিতে বিদ্রোহী দুই প্রার্থী গলার কাটা হয়ে দাঁড়াবে বলে মত দিয়েছেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মনছুর আলম নানক। তিনি বলেন, পেকুয়ার অন্য ইউনিয়ন গুলোর তুলনায় মগনামার নির্বাচন হবে খুবই চ্যালেঞ্জিং। এরমধ্যে নৌকার বিরুদ্ধে দলের দুই নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পথচলা কঠিনই হবে।

মগনামায় নৌকা পাওয়া প্রার্থীকে জনবিচ্ছিন্ন নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মোজাম্মেল। তিনি মনে করেন এ ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে পেতে চায়।

অন্য বিদ্রোহী প্রার্থী খোরশেদুল ইসলাম বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তাঁর জনপ্রিয়তা বলতে কিছু নেই। তাই আশা করছি দলের হাইকমান্ড মগনামার বিষয়ে একটু নমনীয় হবে। আমি নির্বাচনী মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকবো কিনা তা ১১ নভেম্বরের পরে সিদ্ধান্ত নিব।

পেকুয়া সদর ও রাজাখালী ইউনিয়নে পৃথকভাবে দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন, সদর ইউনিয়ন থেকে উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি ছদর উদ্দিন ওমর রিয়াজ চৌধুরী ও রাজাখালী থেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ছৈয়দ নূর। এরমধ্যে ছৈয়দ নূর গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে রাজাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল বহিষ্কার করবে কি করবে না তা আমার দেখার বিষয় নয়! রাজাখালীর জনগণ আবার আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে পেতে চাই। সেটাই বড় কথা।

রাজাখালী ইউনিয়ন থেকে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল বলেন, নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিচয় দিয়ে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন যারা করবে তাঁরা প্রকৃত আওয়ামী লীগ হতে পারেনা। মুলত নৌকার পরাজয় নিশ্চিত করতেই তাঁরা মাঠে নেমেছে।

বিদ্রোহী প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকলে দল তাঁদের বহিষ্কার করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক। নৌকা জননেত্রী শেখ হাসিনার মার্কা এই নৌকা।

সুতরাং নৌকার বিরুদ্ধে যারা নির্বাচন করে নৌকা ডুবির কারণ হবে তাঁরা আওয়ামী লীগ হতে পারেনা। আশা করবো সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে মাঠে নামবে।